
নড়িয়া দক্ষিণ চাকধ গ্রামে প্রতারক প্রেমিককে দায়ী করে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদন
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চাকধ গ্রামে চিঠি লিখে দশম শ্রেণীর ছাত্রী তাহমিনা (১৭) প্রেমিক জুম্মনকে দায়ী করে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ বিকাল৫টার দিকে নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাকধ গ্রামের জব্বার খানের ঘরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে তাহমিনা আক্তার (১৭) অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। নড়িয়া লোনসিং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। প্রেমিক জুম্মন গাজী (২০) নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের পন্ডিত সার জালিয়া হাটি গ্রামের জাহাঙ্গীর মেম্বারের ভাগিনা , ইতালি প্রবাসী মকবুল হোসেনের পুত্র। মৃত তাহমিনা আক্তার এর বাড়ির পাশে প্রেমিক জুম্মন গাজীর আত্মীয় থাকার কারণে জুম্মন গাজী ওই বাড়িতে মাঝেমধ্যেই বেড়াতে আসত। ওই আত্মীয়র বাড়িতে মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসার কারণে জুম্মন গাজীর তাহমিনা আক্তার এর সাথে প্রথম পরিচয় হয়, পরে কথা হয় অবশেষে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের প্রেমের সম্পর্কটি জুম্মনের মা জেনে গেলে আত্মহত্যার প্রায় ২০ দিন আগে জুম্মন গাজীর মা তাহমিনা আক্তার কে বাড়িতে ডেকে নেয় এবং জুম্মন গাজীর মা তাহমিনাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ,অপমান করে এবং বলে তোমার আসল বাবা-মা কোথায়? তুমিতো জব্বার খান এর পালক মেয়ে, তোমাদের এই প্রেম কখনো মেনে নিব না, আমার ছেলের কাছ থেকে একেবারে সরে যাও।
গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২০বেলা ১২ টার দিকে প্রেমিক জুম্মনের মা তাহমিনাকে বাড়িতে ডেকে নেয় এবং তাহমিনা ওই বাড়ি থেকে আসার পরে ওই দিনেই বিকেলের দিকে নিজ ঘরে পত্র লিখে প্রেমিক জুম্মনকে দায়ী করে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। ওই দিন বিকেলে তাহমিনার পালক মা নাজমা বেগম প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলে ওই ফাঁকে তাহমিনা কষ্টে অপমানে লজ্জায় ঘৃণায়, তার আসল মা-বাবার পরিচয় ও তাদেরকে দেখার আক্ষেপ জানিয়ে এবং প্রেমিক জুম্মনকে দায়ী করে পত্র লিখে আত্মহত্যা করে। তাহমিনার আত্মহত্যার বিষয়টি নড়িয়া থানার পুলিশ জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে চলে যায় এবং লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য তাহমিনার মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
আত্মহত্যার পূর্বের নিজ হস্তে তাহমিনার লেখা চিঠি।
প্রিয় মা বাবা,
মা-বাবা প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পারলে তোমরা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জন্য তোমাদের আর অপমান হতে হবে না। চলে যাচ্ছি আমি তোমাদের ছেড়ে এ পৃথিবী ছেড়ে। এ জীবনে আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। যদি কেউ হয় সে আমি নিজে আর জুম্মন। জুম্মন এর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে, ওকে ছেড়ো না। আগেরবার তোমাদের জন্য আমি নিজেকে কিছুই করতে পারিনি। তবে এবার তোমাদের মায়া এবং এই পৃথিবীর মায়া ছাড়িয়ে যাব। সবাই ভালো থেকো পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জীবনের শেষ সময়ে এসে গেছে। মা- আব্বু তোমাদের ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে তোমরা আমাকে জন্ম না দিয়েও মানুষ করেছ, সেটা আমার নিজের মা-বাবা করতে পারেনি। তবে একটা আক্ষেপ রয়ে গেল নিজের বাবা-মাকে দেখে যেতে পারলাম না। ভাইকে দেখে রেখো ও যা চায় তাই দিও। আর ভাই, মা-বাবাকে কখনো কষ্ট দিও না। পারলে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তাহমিনার পালক পিতা জব্বার খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তাহমিনাকে নড়িয়া বাজার নদীর ওপার চর অঞ্চল থেকে তিন মাস বয়সে পালক আনি। আজ আমার মেয়ের বয়স ১৭ বছর, দশম শ্রেণীতে পড়ে। আমার মেয়ে যেদিন আত্মহত্যা করে সেদিন বেলা বারোটার দিকে আমার মেয়েকে জুম্মনের মা তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি থেকে আসার পরে আনুমানিকবিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমার ঘরে গলা ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে এবং আমার মনে হয় জুম্মনের মা আমার মেয়েকে অপমান জনক কথা বলেছে সেই কারণে জুম্মনকে দায়ী করে চিঠি লেখে আত্মহত্যা করে।
আমি এখন জুম্মন ও জুম্মনের মা এর বিচার দাবি করছি। আমি বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
নড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাফিজুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন তাহমিনার আত্মহত্যা কে কেন্দ্র করে তাহমিনার বাবা জব্বার খান একটি মামলা দায়ের করেন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।